ইউক্রেনে পোর্ট অলিভিয়ায় বাংলাদেশী জাহাজ বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেট হামলায় নিহত হাদিসুর রহমান আরিফের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। নিহত নাবিক হাদিসুর রহমান আরিফের বাড়ী বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনবাদ ইউনিয়নে। তার বাবার নাম আঃ রাজ্জাক ও মায়ের নাম আমেনা বেগম।

বুধবার স্থানীয় সময় বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে ইউক্রেনের অলিভিয়া পোর্টে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধিতে রকেটে করে বোমা হামলা চালায় রাশিয়া। এতে জাহাজে থাকা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হন। তিনি ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আরিফের নিহতের খবর শোনার পর ওই ইঞ্জিনিয়ারের বাড়ি বেতাগীতে চলছে শোকের মাতম।

বেতাগী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মাকসুদুর রহমান ফোরকান ও নিহত নাবিক হাদিসুর রহমানের চাচা বলেন, আমরা এই ঘটনা শুনে একদম মর্মাহত হয়ে পড়েছি। হাদিসুর রহমানের বাবা আমার বড় চাচাত ভাই। তিনি সত্তরোর্ধ বয়স্ক ব‍্যক্তি। পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক। বর্তমানে তিনি শারীরিক ভাবে খুবই অসুস্থ। এমনকি তার মাও শারীরিক ভাবে অসুস্থ এবং আজকেই পটুয়াখালী থেকে চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে এসেছে। এই সময় এমন খবর পেয়ে সবাই আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বলেন, হাদিসুর রহমান আরিফ সে বেতাগী পাইলট উচ্চ বিদ‍্যালয় থেকে এস এস সি ও বেতাগী সরকারী কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করেছে জিপিএ ৫ পেয়ে। ছাত্র জীবনে খুবই মেধাবী ছিল। চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমি থেকে সে মেরিন প্রকৌশলীতে ৪৭ তম ব‍্যাচে খুবই ভালো রেজাল্ট করে চাকুরীতে যোগদান করে। ব‍্যক্তি জীবনে হাদিসুর রহমান ছিল অবিবাহিত। এবার বাংলাদেশে আসলে তাকে আমাদের পরিবার থেকে বিয়ে করানোর কথা ছিল।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটিতে পাঁচ বছর যাবৎ চাকরি করছিলেন আরিফ। ইউক্রেনের সময় বুধবার বিকাল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে তাদেও জাহাজে হামলা হয়েছে। জাহাজে আরিফসহ বাংলাদেশের ২৯ জন নাবিক ছিলেন। বাকিরা সুস্থ আছেন।

নিহত হাদিসের ছোট ভাই মো. তারেক বলেন, ‘আমরা জাহাজে থাকা আরিফের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকেই আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন, মা বেহুঁশ।’

তিনি বলেন, ‘বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই সময়ে ফোনে বলেন,‘ভাই আমাদের আর ভাঙ্গা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক ঘরের কাজ ধরবো।ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে আরিফ শঙ্কিত ছিল বলেও জানান তিনি। বাড়ি ফেরার তাড়া অনুভব হয়েছিল আরিফের কথায়। বাড়ি ফিরে কী কী কাজ করবে, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তার একটি আলোচনাও করেন।

তারেক আরও বলেন, তিনি সরকারের কাছে অনুরোধ করেন, যাতে দ্রুত তার ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।